শামীম আহমেদ ॥ বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার আড়িয়াল খাঁ ও জয়ন্তী নদীর ভাঙনের কবলে পরেছে ১৫টি গ্রাম। বর্ষার শুরুতে ভাঙনের মুখে পরে এসব গ্রামের সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে পরেছেন। গত এক সপ্তাহে রাক্ষুসী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে মুলাদীর চরকালেখান ইউনিয়নের ছত্রিশ ভেদুরিয়া বাসস্ট্যান্ড। এছাড়া নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভাঙনের শিকার ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুম শুরুর সাথে সাথে আড়িয়াল খাঁ নদীর যৌবণ ফিরে আসলে দানব রুপে শুরু হয়েছে নদী ভাঙ্গন। প্রতি বছর বর্ষা শুরুর সাথে সাথেই ভাঙনের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এ বছরও রেহাই পাচ্ছেনা মুলাদীর কাচিরচর ও রামারপোল গ্রামবাসী। ওই গ্রামের কয়েকশ’ ঘরবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে পরেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পরেছেন ওইসব গ্রামের দিনমজুর পরিবারগুলো। শুক্রবার দিবাগত রাতে কাচিরচর নদীর লঞ্চঘাট সংলগ্ন মাসুদ স্ব-মিল নামের একটি মিল আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনের স্বীকার হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজু ভূঁইয়া জানান, ওইদিন রাতে প্রায় ২০ শতক জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। পাশাপাশি স্ব-মিলের পাশের একটি মসজিদ নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তিনি আরও জানান, নদী ভাঙনের ফলে কাচিরচর ও রামারপোলবাসীর জনজীবন হুমকির মুখে পরেছে। সূত্রমতে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী বালুখেকো চক্র প্রতিবছর অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালু খেকোদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা ও ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কাচিরচর ও রামারপোল গ্রামবাসীর উদ্যোগে শনিবার সকালে নদীর তীরে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে সরকারী উদ্যোগে বাঁধ নির্মান ও ভাঙন কবলিত ক্ষতিগ্রস্থদের পুর্নবাসনের জোর দাবি করেন।
স্থানীয় রুহুল আমিন ভূঁইয়া জানান, ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি ২০১৬ সালে বরিশালের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন। জেলা প্রশাসক ড. মোঃ গাজী সাইফুজ্জামান ওই বছরের ১৮ জুন বিষয়টিরোধকল্পে প্রস্তাবটি গ্রহণ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি অবগত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেন। তিনি (রুহুল আমিন) আরও জানান, আকস্মিকভাবে জেলা প্রশাসক ড. মোঃ গাজী সাইফুজ্জামান বরিশাল থেকে অন্যত্র বদলি হওয়ায় ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগটির আর সুফল মেলেনি। ভাঙনরোধে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে নতুন করে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সম্প্রতি নদী ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে।
মুলাদী উপজেলার চরকালেখান, সফিপুর, বাটামারা, নাজিরপুর, মুলাদী সদর ও কাজিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, গত এক সপ্তাহে রাক্ষুসী জয়ন্তী নদীর ভাঙনে চরকালেখান ইউনিয়নের ছত্রিশ ভেদুরিয়া বাসস্ট্যান্ড নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া জয়ন্তী ও আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে উপজেলার পশ্চিম চরকালেখান ঢালী বাড়ি লঞ্চঘাট এলাকা, সফিপুর ইউনিয়নের চরমালিয়া, ছোট লক্ষ্মীপুর, ব্রজমোহন, বাটামারা ইউনিয়নের চরবাটামারা খেয়াঘাট এলাকা, সেলিমপুর খেয়াঘাট, চরআলিমাবাদ, চরসাহেবরামপুর, চরআলগী, নাজিরপুর ইউনিয়নের ঘোষেরচর, কাচ্চিচর, ভূঁইয়াবাড়ি লঞ্চঘাট, মুলাদী সদর ইউনিয়নের ভাঙ্গারমোনা, চরলক্ষ্মীপুর নন্দীর বাজার এলাকা, কাজিরচর ইউনিয়নের পশ্চিম ডিক্রীরচর গ্রাম ভাঙনের কবলে পরেছে। এসব গ্রামের সাধারণ মানুষ আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছেন। নদী ভাঙনে হুমকির মুখে পরেছে উপজেলার ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত চরলক্ষ্মীপুর ফাজিল মাদরাসা, সফিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাটামারা ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং নাজিরপুর ঘোষেরচর দাখিল মাদরাসা।
স্থানীয়রা জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে খুব শীঘ্রই এসব গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এতে করে উপজেলায় পাঁচ সহ¯্রাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পরবে। এ ব্যাপারে মুলাদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন জানান, ভাঙন কবলিত গ্রামগুলোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে তাৎক্ষনিক ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply